বাংলাদেশে কোটা আন্দোলন কি?
বাংলাদেশের কোটা আন্দোলন একটি লজ্জাজনক ইতিহাস বাংলাদেশ সরকার
ও জনগণের জন্য। এই আন্দোলনে আনুমানিক ২০০ শত লোক প্রাণ হারিয়েছে যদিও এখন পর্যন্ত সরকার বলছে ১৪৭ জন | ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে ছাত্র আন্দোলনেও পাকিস্তানী সেনা বাহিনী গুলি করে এত মানুষ হত্যা করে নি।
কেন বাংলাদেশে কোটা আন্দোলন ?
বাংলাদেশে স্বাধীনতার পর থেকে কোনো সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয় নি শিল্পায়নের জন্য। তাই প্রয়োজনীয় কাজের সুযোগ সৃষ্টি হয় নাই আমাদের যুব সমাজের জন্য। দেশে কলকারখানা প্রতিষ্টিত না করে বিদেশী পণ্যের উপর নির্ভরশীল হয়ে গেছি আমরা । এই অতি বিদেশী নির্ভরতা আমাদের জাতীয় অস্তিত্বের উপর হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে | তাই সবাই কাজের জন্য সরকারি চাকরির উপর নির্ভর করে।
নিয়োগের ক্ষেত্রে যখন
বর্তমান সরকার কর্তৃক কোটা (৫৬% কোটা ও ৪৪% মেধা ) প্রজ্ঞাপন পাস হয় তখন থেকে ছাত্রদের মধ্যে অসন্তুষ দানা বাঁধতে থাকে | ২০১৮
সালে হাই কোর্ট এর কোটা সংক্রান্ত রায়ের বিরুদ্ধে
ছাত্ররা আন্দোলন শুরু করে | ছাত্রদের এই আন্দোলনকে সরকার ও কোর্ট দ্রুততার সাথে সমাধান না করে বড় ভুল করেছে। তাদের এই আন্দোলন ২০২৪ সালের জুলাই মাসে বিস্ফোরণ আকারে দেখা দিয়েছে |
২০২৪ সালের জুলাই মাসের শুরু থেকে ছাত্ররা রাস্তায় শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করে আসছিলো কোটা সংস্কারের জন্য | সরকার এই আন্দোলনকে গুরুত্ব না দিয়ে বরং ভুল ভাষা ব্যবহার করেছে ও কিছু মন্ত্রী উস্কানিমূলক বক্ত্রিতা দিয়ে সাধারণ ছাত্রদের বিরুদ্ধে গুন্ডা বাহিনী লেলিয়ে দেয়। ১৬ জুলাই দুপুর ২টা থেকে প্রায় ৬ টা পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় গুন্ডা বাহিনী ও সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে মারামারি চলতে থাকে । এই দীর্ঘ সময় পুলিশ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মারামারি বন্ধের জন্য দ্রুত কোন ব্যবস্থা নেয় নাই। ফলে অনেক ছাত্র ছাত্রী ঐদিন আহত হয় | আর পরের দিন থেকে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ শিক্ষার্থী বিশেষ করে ঢাকা সিটি কলেজ , আইডিয়াল কলেজ ও ঢাকা কলেজ সহ কোটা আন্দোলনকারী ছাত্র, বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ও পুলিশ এর মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয় ও ৬ জন ছাত্র মারা যায়।
ছাত্রদের আন্দোলনের এই সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল শুক্রবার থেকে ভাঙচুর ও জ্বালাও পুড়াও শুরু করে সরকারি বিভিন্ন স্থাপনায় । পরিস্থিতি অত্যন্ত খারাপ এর দিকে যেতে থাকায় শুক্রবার রাত থেকে আর্মি নামানো হয় সমগ্র দেশে। সারা দেশে জারি হয় কারফিউ |এই পরিস্তিতিতে কোটা আন্দোলনের সমন্বয়কারীদের তিনজন ছাত্র আইন, শিক্ষা ও তত্ত্ব প্রতিমন্ত্রীর আমন্ত্রণে বৈঠক এ বসে। ছাত্ররা তাদের ৮ দফা দাবি পেশ করে সরকারের কাছে ।
এই দাবিগুলুর প্রথম দাবি ছিল কোটা ৫% নামিয়ে আনা । এই পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্ট কারফিউ চলাকালীন অবস্থায় রবিবার ২১শে জুলাই ৭% কোটা নির্ধারণ করে রায় দেয়। যার মধ্যে মুক্তিযুদ্ধার সন্তান ৫ শতাংশ এবং ক্ষুদ্র নৃগুস্টির জন্য ১ শতাংশ এবং শারীরিক প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য ১ শতাংশ | কিন্তু রায়ের পরপরই সরকারি ও বেসরকারি দলের উকিল সাহেবরা কোর্ট চত্বরে বলেছিলো এই ৫% কোটা মুক্তি যোদ্ধা, তাদের সন্তান ও তার নাতি নাতনিদের জন্য কিন্তু সরকারি প্রজ্ঞাপনে বলা হয় মুক্তিযুদ্ধা ও তার সন্তান দের জন্য | তাই এখানে মুক্তিযুদ্ধাদের নাতি নাতনিদের একটি ক্ষোভ রয়ে গেলো সকারের উপর |
অপরদিকে
সরকার কোটা আন্দোলনকারী সমন্বয় কারীদের কয়েকজনকে
আটক করে ও শারীরিক নির্যাতন চালায়। এটা সরকারের
আরেকটা ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। বিশেষ করে
নাহিদ ইসলাম কে নির্মমভাবে নির্যাতন করে। এই নির্যাতন এর আলামত দেখে দেশের জনগণ দারুণভাবে
শেখ হাসিনার সরকারের উপর আস্থা হারাতে থাকে।
আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর উপর তাদের ঘৃণা প্রকাশ করতে থাকে | ছাত্রদের ছোট একটি দাবি মানার সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে সেনাবাহিনী ও কামান ব্যবহার করতে হয়েছে ; সাধারণ মানুষকে গুলি করে হত্যা করতে হয়েছে | শত শত লোককে হাসপাতালের বেডে শুয়ে কাতরাতে হচ্ছে |
বাংলাদেশের ইতিহাসে এই কলঙ্কময় ঘটনা সত্যি দুঃখজনক ও লজ্জাজনক। এটা সরকারের ব্যার্থতা ও অদক্ষতা প্রমান করে | সারা বিশ্বের প্রবাসী বাঙালিরা অত্যন্ত লজ্জা বোধ করে ও প্রতিবাদের স্লোগানে ফেটে পরে | সোশ্যাল মিডিয়াতে এইসব নির্মম কাহিনী ও ভিডিও ফুটেজ দেখে বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা সরকারের সমালোচনা করতে থাকে |
প্রবাসীরা এত কষ্ট করে টাকা পাঠাচ্ছে দেশে আর সেই টাকায় সরকার দেশ চালাচ্ছে । কিন্তু সরকারের অদক্ষতা নতুন নতুন কু-খবর উপহার দিচ্ছে তাদেরকে। বিদেশে বসে যখন তারা আপন ভাই বোন হত্যার খবর দেখে তখন সরকারের প্রতি তাদের একধরণের ঘৃণা জন্ম নেয়।
আমার মতে দেশি ও প্রবাসী বাংলাদেশী মানুষের কাছে সরকারের ক্ষমা প্রার্থনা করা উচিৎ| কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে এই ঘটনার জন্য ছাত্রদের দাবিগুলি কালক্ষেপন না করে জরুরি ভিত্তিতে সমাধান করা উচিৎ |
No comments:
Post a Comment