ফিলিস্তিন ও ইস্রায়েল যুদ্ধ 2023
ব্রিটিশ কলোনিয়াল সময় থেকেই ইসরাইল সরকার ফিলিস্তিনিদের উপর অন্যায় অত্যাচার চালিয়ে আসছে। এপর্যন্ত বহুবার ফিলিস্তিনিদের সাথে যুদ্ধে জড়িয়েছে ইসরাইল।
১৯১৭-১৯৪৮ সাল পর্যন্ত
ব্রিটিশ শাসন ছিল ফিলিস্তিনে। ১৯৪৭ সালের নভেম্বর
মাসে জাতিসংগ (UN ) এর পরামর্শ মতে রিসোলিউশন
১৮১ চুক্তি অনুযায়ী আরব ও জিউস স্টেট এর সৃষ্টি
হয়। এরপর ব্রিটিশ রা ১৫ মে ১৯৪৮ সালে
ফিলিস্তিন ত্যাগ করে।
ব্রিটিশ শাসন আমলে প্রথম বিশ্ব যুদ্ধ চলা কালে ফিলিস্তিনে
অবস্থিত জেউসদের সাপোর্ট পাওয়ার জন্য জিউস
দের ফেভরে কাজ করে ব্রিটিশ সরকার । অন্যদিকে অটোমান সাম্রাজ্যের পতনের জন্য আরবদের
সাহায্য কামনা করে এই মর্মে যে তারা আরব স্টেট এর জন্য কাজ করবে।
কিন্তু ১৯১৮ সালে অটোমান সাম্রাজ্য পতনের পর ব্রিটিশ আর তার
প্রতিজ্ঞা রাখে নাই। ১৯২০ সাল থেকে পরবর্তী ২ যুগে প্রায় ১০০,০০০ ইহুদি বাইরে থেকে
ফিলিস্তিনে ঢুকার সুযোগ দেয়। ব্রিটিশ তার কমিটমেন্ট রাখে নাই মিডল ইস্ট তথা আরব দেশ
গুলুর প্রতি।
এত পরিমানে ইহুদি মাইগ্রেশন কে ফিলিস্তীনের নাগরিকরা স্বাভাবিক
ভাবে নিতে পারে নাই। ফলে বিভিন্ন মিলিট্যান্ট গ্রুপ গড়ে উঠে। তারা ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে থাকে। যাদের
দমানোর জন্য জাতিসঙ্গ পরে MANDATE দেয় ফ্রান্স কে সিরিয়া ও লেবানন শাসন করার জন্য,
ব্রিটিশ কে ইরাক এন্ড PALISTINE শাসন করার
জন্য।
১৯৪৭ সালে জাতিসংঘ এর রিসোলিউশন ১৮১ অনুযায়ী ইসরাইল ও আরব রাষ্ট্র প্রতিষ্টা
হয়। পরে ১৯৪৮ সালে ইস্রায়েল অবৈধ ভাবে যুদ্ধ শুরু করে প্রতিবেশী আরব রাষ্ট্রের সাথে ও যুদ্ধে ইসরাইল জয় লাভ করে এবং ৭৫০০০০ ফিলিস্তিনে
রেফিউজি হয়ে আশেপাশের দেশে ছড়িয়ে পড়ে । তখন
দেশটি তিন ভাগ হয় যা ইসরাইল, আরব স্টেট ও ওয়েস্ট ব্যাংঙ্ক নাম এ পরিচিতি লাভ করে
১৯৫৬ সালে সুয়েজ খাল দখলের জন্য ইসরাইল, ইংল্যান্ড ও ফ্রাঞ্চ
মিশরের উপর আক্রমণ করে। অবশেষে আমেরিকার সহযোগিতায় জাতি সঙ্গের সৈন্য মোতায়েন করে ও সুয়েজ খাল এর মালিকানা ফিরে পায় মিশর। তখন থেকে ফ্রেঞ্চ
ও ব্রিটিশ আদিপত্য শেষ হয় ও মার্কিন আদিপত্য বাদিতা শুরু হয় মিডল ইস্ট এ।
এরপর ১৯৬৭ সালে আবার যুদ্ধ বাঁধে। এই যুদ্ধে ইসরাইল জয় লাভ
করে। মাত্র ৬ দিনের যুদ্ধে ইসরাইল মিশরের সিনাই ও গাজা তীর ,জর্দানের ইস্ট জেরুজালেম
ও ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক এবং সিরিয়ার গোলান মালভুমি দখল করে নেয়। এর ছয় বছর পর মিশর ও সিরিয়া
পাল্টা আক্রমণ করে তাদের হারানো এলাকা ফিরে পায়। ১৯৭৯ সালে ক্যাম্প ডেভিড প্যাক্ট এর
মাধ্যমে ইসরাইল ও মিশরের মধ্যে ৩০ বছরের যুদ্ধের অবসান হয়।
ক্যাম্প
ডেভিড চুক্তি ইস্রায়েল এর পার্শবর্তী দেশ গুলির জন্য শান্তির
বার্তা থাকলেও প্যালেস্টাইনের স্বশাসিত সরকার ব্যাবস্থার জন্য কোনো সুবাতাস বয়ে আনে
নি। এই চুক্তির আগে ইন্তিফ়াদা১ তৈরি হয় ১৯৮৭ সালে যাতে ফিলিস্তিনের মানুষ ইস্রায়েল এর অবৈধ বসতি গড়ে তুলার বিরুদ্ধে
যুদ্ধ শুরু করে। সেপ্টেম্বর 2000 সালে ইন্তিফ়াদা ২ শুরু হয় ইসরাইল এর প্রধান মন্ত্রী
SHERON এর আল আকসা মসজিদ সফরের পর। ইস্রায়েল ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক এর চার দিকে
ওয়াল তৈরি করে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্গন করে।
স্বশাসিত ফিলিস্তিনে আজপর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে অনেকবার যুদ্ধ
হয়েছে ফিলিস্তিন ও ইসরাইল এর মধ্যে। হামাস
লিড দিছে গাজা এলাকা আর ফিলিস্তিন প্রেসিডেন্ট আব্বাস ফাত্তাহ এর পক্ষ থাকে পশ্চিম তীর এলাকা।
ব্রিটিশ রা ফিলিস্তিনে ছেড়ে যাওয়ার পর আমেরিকা সব সময় ইস্রায়েল
এর পক্ষ নিয়েছে ও তাদের অবৈধ কর্ম কান্ড ও
যুদ্ধ কে সমর্থন করে অর্থ ও মিলিটারি সহায়তা দিয়ে আসছে। ট্রাম্প প্রশাসন ২০১৮ সালে
ফিলিস্তিন রেফুজিদের জন্য জাতিসংঙ্গ প্রদত্ত
মানবিক সহায়তা বন্ধ করে দেয়। জেরুজালেম কে ইসরাইলের রাজধানী করার জন্য ইসরাইলকে সহায়তা
দিতে থাকে।
আমেরিকা মধ্যপ্রাচ্যে তাদের নেতৃত্ব ধরে রাখা ও জ্বালানি
তেলের সরবরাহ অক্ষুন্ন রাখার জন্য ইস্রায়েল নামক রাষ্ট্রকে সন্ত্রাসী কাজে সহায়তা
দিয়ে আসছে । সেটা ডেমোক্রেটিক বা রিপাবলিক
যাই হোক।
সম্প্রতি ৭ অক্টোবর 2023 হামাস ইসরাইল এ রকেট হামলা করার
পর আজ পর্যন্ত দশ হাজার ফিলিস্তিনি কে হত্যা
করেছে। আহত করেছে প্রায় পঁচিশ
হাজার, ঘর বাড়ি ছাড়া হয়েছে চোদ্দ লক্ষ ফিলিস্তিনি । যাদের এক তৃতীয়াংশ নিষ্পাপ শিশু
| গর্বের সাথে ISRAEL এই GENUCIDE এর কাজ চালিয়ে
যাচ্ছে।
ইস্রায়েল এয়ার ফোর্স শুধু আবাসিক এলাকায় নয় তারা হাসপাতাল,
স্কুল ও রেফিউজি ক্যাম্প এ বিমান হামলা চালাচ্ছে।
তাদের এ বর্বরতা আগের যেকোনো যুদ্ধের
নৃশংসতাকে ছাড়িয়ে গেছে।
বিশ্বব্যাপী যুদ্ধ বন্ধের ঝড় উঠেছে সোশ্যাল মিডিয়াতে, মানুষ
রাস্তায় প্রতিবাদ জানাচ্ছে বিভিন্ন দেশে ; তারপরও সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ইস্রায়েল যুদ্ধ
থামাতে রাজি হচ্ছে না। জাতিসংঙ্গ সাধারণ পরিষদে
যুদ্ধ বন্দের প্রায় সব দেশ একমত হয়ে অনুরূধ জানিয়েছে কিন্তু ইসরাইল বিশ্ব মতামতকে বৃদ্ধাঙ্গুলি
দেখাচ্ছে।
আমরা এখন কোথায় বাস করছি? বিশ্ব কি আবার আদিম যুগে চলে গেলো?
প্রতিদিন শিশু মহিলা সহ শত শত নির্দোষ ফিলিস্তিন নাগরিক ইস্রায়েল সৈন্যদের বিমান ও স্থল হামলায় মারা যাচ্ছে।
বিল্ডিঙের নিচে চাপা পরে শত শত মানুষ কাতরাচ্ছে ফিলিস্তিনের এই মর্মান্তিক দৃশ্য বিশ্ব
ব্যাপী মানুষের বিবেক কে কেন নাড়া দিচ্ছে না?
কোথায় বিশ্ব লিডার রা যারা ইস্রায়েল নামক স্টেট সৃষ্টিতে
সহায়তা করেছে , কোথায় আরব দেশের নেতারা যারা একসময় পশ্চিমাদের দালালি করেছে ? তারা
কেন সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ইস্রায়েল এর সাথে রাজনৈতিক ও ব্যাবসায়িক সম্পর্ক ছিন্ন করছে না কোথায় মুসলিম রাষ্ট্র টার্কি ও ইরান? তারা কেন ইস্রায়েল
কে শিক্ষা দিতে এগিয়ে আসছে না?
২০২৩ গাজা ইস্রায়েল যুদ্ধ বিশ্বকে
আবার জানান দিচ্ছে আমেরিকা কোন ধরণের
রাষ্ট্র? আমেরিকাই পারে ইস্রায়েল কে থামাতে কিন্তু তারা তা না করে উল্টো সন্ত্রাস ও
যুদ্ধ অপরাধীদের সহায়তা করে যাচ্ছে। তাই প্রত্যেক রাষ্ট্র কে এখন থেকেই ঠিক করতে হবে
তারা কি সন্ত্রাসী রাষ্ট্র এর সাথে সম্পর্ক রাখবে নাকি রাখবে না? যারা নিজেদের স্বার্থকে
প্রাধান্য দিয়ে বিশ্ব বিবেককে বৃদ্ধাঙ্গলী দেখাচ্ছে তাদের সাথে সকল সম্পর্ক ছিন্ন করার
সময় এসেছে এখন ।
ধন্যবাদ আল জাজিরা টেলিভশন কে তারা সাংবাদিকের জীবনের ঝুঁকি
নিয়ে ইস্রাইলি সরকারের বর্বরতার দৃশ্য টিভির
পর্দায় দেখিয়ে যাচ্ছেন বিরামহীনভাবে। তাদের মাধ্যমে বিশ্ববাসী জানতে পারছে বর্বর ইস্রাইলি নেতানিয়াহু সরকার কিভাবে কৃত্রিম ভূমিকম্প
তৈরি করে নির্দুষ নিষ্পাপ শিশুদেরকে বিল্ডিং এর নিচে চাপা দিয়ে গণহত্যা চালাচ্ছে। তাদের ভাব দেখে মনে হচ্ছে তারা হামাস নয় বরং ফিলিস্তিন
নামক দেশকে ধ্বংস করার খেলায় মেতেছে।
ARTICLE SOURCES:
https://www.nam.ac.uk/explore/conflict-Palestine
https://www.cfr.org/global-conflict-tracker/conflict/israeli-palestinian-conflict
Arab-Israeli
wars | History, Conflict, Causes, Summary, & Facts | Britannica
https://www.aljazeera.com/news/2008/2/29/the-1956-suez-war
No comments:
Post a Comment